বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

কখন মুখ্য শর্তকে গৌণ শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়?

অনেক সময় মুখ্য শর্তকে গৌণ শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৩০ সালের পণ্য বিক্রয় আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে মুখ্য শর্ত গৌণ শর্ত হিসেবে গণ্য হতে পারেঃ

  1. স্বেচ্ছাকৃত পরিহারঃ ক্রেতা মুখ্য শর্ত ভঙ্গকে গৌণ শর্ত হিসেবে গ্রহণ করলে এবং চুক্তি বর্জন না করে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা দায়ের করলে মুখ্য শর্ত গৌণ শর্ত হিসেবে গণ্য হয়। [১৩(১) ধারা]
  2. বাধ্যতামূলক পরিহারঃ যে পণ্য বিক্রয় চুক্তিকে পৃথক করা যায় না এবং ক্রেতা সকল পণ্য বা তাঁর কিছু অংশ গ্রহণ করেছে অথবা নির্দিষ্ট পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্যের মালিকানা ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়েছে সেক্ষেত্রে বিক্রেতার দ্বারা পণ্য ফেরত বা চুক্তি বর্জনের কারণ রুপে গণ্য হবে না। [১৩(২) ধারা]
  3. নির্দিষ্ট পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রেঃ নির্দিষ্ট পণ্য বিক্রয় চুক্তিতে যখন পণ্যের মালিকানা ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়, তখন মুখ্য শর্ত ভঙ্গ হয়েছে এ কারণে ক্রেতা চুক্তিটি বর্জন করতে পারেনা। এরুপ ক্ষেত্রে মুখ্য শর্ত ভঙ্গ, গৌণ শর্ত ভঙ্গ হিসেবে গণ্য হয় এবং ক্রেতা শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণ পাবার অধিকারী হয়। [Street Vs. Blake (1831) 2B &Ad. 356]

কোম্পানীর স্মারকলিপির বিষয়বস্তু বা ধারাগুলো বর্ণনা কর।

কোম্পানীর স্মারকলিপির বিষয়বস্তু বা ধারাগুলো বর্ণনা কর।
কোম্পানীর পরিমেলবন্ধের  বিষয়বস্তু কি?
স্মারকলিপি কোম্পানীর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের ৬ ধারায় শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানী, ৭ ধারায় প্রতিশ্রুতি ধারা সীমাবদ্ধ কোম্পানী এবং ৮ ধারায় অসীম দায়সম্পন্ন কোম্পানীর স্মারকলিপির বিষয়বস্তু  বর্ণিত হয়েছে। আমাদের দেশে বহুল আলোচিত শেয়ার দ্বারা দায় সীমাবদ্ধ প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর স্মারকলিপিতে যে সকল বিষয়ের উল্লেখ করতে হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ-
  1. নাম ধারাঃ এ ধারায়  কোম্পানীর না এবং নামের শেষে লিমিটেড শব্দটি উল্লেখ করা হয়। কোম্পানীর নামকরণে দেশে প্রচলিত অন্য কোন কোম্পানীর নাম ব্যবহার করা আইনসম্মত নয়। এছাড়া সরকারের অনুমতি ছাড়া রাজা, রাণী, রাষ্ট্রপতি প্রভৃতি শব্দ কোম্পানীর নামকরণে ব্যবহার করা যায় না।
  2. অবস্থান ও ঠিকানা ধারাঃ এ ধারায় কোম্পানী নিবন্ধিত অফিসের অবস্থান ও ঠিকানা এবং কোন এলাকায় কোম্পানী কারবার পরিচালনা করবে তার উল্লেখ করা হয়।
  3. কারবারের এলাকা ধারাঃ এ ধারায় ভবিষ্যতে কোম্পানী যে সমস্ত এলাকায় কারবার করবে তা উল্লেখ থাকে।
  4. উদ্দেশ্য ধারাঃ এ ধারায় কোম্পানী গঠনের মূল উদ্দেশ্য বা কার্যক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়। এ ধারায় উল্লেখ করা হয়নি এমন কোন কাজ কোম্পানী করতে পারে না।
  5. দায় ধারাঃ এ ধারায় শেয়ার মালিকদের দায়-দায়িত্বের প্রকৃতি উল্লেখ থাকে। শেয়ার মালিকদের দায় ক্রীত শেয়ারের মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে, না প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে তার স্পষ্ট উল্লেখ করতে হয়।
  6. মূলধন ধারাঃ এ ধারায় কোম্পানীর অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ এবং প্রতিটি শেয়ারের মূল্য কত হবে তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকে।
  7. সম্মতি ধারাঃ এ ধারায় কোম্পানীর প্রাথমিক পরিচালকগণ নির্দিষ্ট সংখক শেয়ার ক্রয় করে পরিচালক হিসেবে কাজ করার সম্মতি উল্লেখ করা হয়।
কোম্পানীর কর্মপরিধি ও কর্মক্ষমতার সীমা স্মারকলিপির উপরোক্ত বিষয়বস্তু বা ধারার আলোকেই নির্ধারিত হয়। এর কোন পরবর্তনের ক্ষেত্রে সাধারণ ও বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে আদালত ও সরকারের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়।

স্মারকলিপি কাকে বলে?

স্মারকলিপি হল কোম্পানীর মূল দলিল, সনদ বা সংবিধান। এতে কোম্পানীর মূল বিষয়াবলী লিপিবদ্ধ করা হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানীর কার্যক্ষেত্রে ও কোম্পানীর সীমা নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে।
যে দলিলে কোম্পানীর নাম, কার্যক্ষেত্র, উদ্দেশ্য, মূলধনের পরিমাণ, সদস্যদের দায় প্রভূতি বিষয় লিপিবদ্ধ থাকে তাকেই স্মারকলিপি বলে।
স্মারকলিপির কতিপয় সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হলঃ-
১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের ২(১-ফ) ধারায় বলা হয়েছে, "স্মারকলিপি বলতে কোন কোম্পানীর বা সমিতির স্মারক বুঝাবে যা প্রথমে প্রণীত হয়েছে অথবা পরে অত্র আইনের বিধান অনুসারে পরিবর্তিত হয়েছে।"
বিচারপতি লর্ড কেয়ার্নস বলেন, "The Memorandum of Association of a company is its charter and defines its limitation of the powers of the company, established under the act."
পরিশেষে বলা যায়, স্মারকলিপি হলো কোম্পানীর মূল দলিল, সনদ বা সংবিধান যাতে কোম্পানীর মূল বিষয়াবলী বিশেষত উদ্দেশ্য, কার্যপরিধি ও ক্ষমতার সীমা নির্দিষ্ট থাকে এবং যার দ্বারা কোম্পানীর সহিত শেয়ারহোল্ডার ও তৃতীয়পক্ষের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।