শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৪

প্রস্তাবের সংজ্ঞা

প্রস্তাবের সংজ্ঞাঃ সাধারণ অর্থে, কোন ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তির নিকট সম্মতি লাভের উদ্দেশ্যে কোন কিছু করা বা না করার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশকে প্রস্তাব বলা হয়।
বাংলাদেশে বলবতযোগ্য ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, "যখন কোণ ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির সম্মতি লাভের উদ্দেশ্যে কোন কিছু করা বা না করা হতে বিরত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে তখন পূর্বোক্ত ব্যক্তি শেষোক্ত ব্যক্তির নিকট একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে বলে ধরা হয়।"
দৃষ্টান্তঃ ক, খ-এর নিকট তার বাড়ীটি ১ লক্ষ টাকায় বিক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে ক, খ-এর নিকট একটী প্রস্তাব করেছে বলে ধরা হবে। খ এতে স্বীকৃতি দিলে চুক্তির সৃষ্টি হবে।

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর সংজ্ঞা

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর সংজ্ঞাঃ- সাধারণভাবে যে কোম্পানীর সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন দুই জন এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং যার শেয়ার অবাধে হস্তান্তর করা যায় না তাকে প্রাইভেট মিলিটেড কোম্পানী বলে।
১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের ২ (১-ট) ধারায় বলা হয়েছে যে, "প্রাইভেট মিলিটেড কোম্পানী বলতে এমন কোম্পানিকে বুঝাবে যা তার নিয়মাবলী অনুসারে শেয়ার হস্তান্তরের অধিকার সীমাবদ্ধ রাখে, কোম্পানীর চাকরিতে নিযুক্ত কর্মচারী ব্যতিত এর সদস্য সংখ্যা পঞ্চাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে এবং শেয়ার ও ঋণপত্র ক্রয়ের জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান নিষদ্ধ থাকে"।

পরিমেল নিয়মাবলীর বিষয়বস্তু

পরিমেল নিয়মাবলীর বিষয়বস্তুঃ পরিমেল নিয়মাবলী হল কোম্পানীর দ্বিতীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এতে কোম্পানীর আভ্যন্তরীণ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার যাবতীয় বিষয়াদি বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। পরিমেল নিয়মাবলীর অন্তুর্ভূক্ত বিষয়সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
  1.           কোম্পানীর পূর্ণ নাম।
  2. কোম্পানীর দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা ও ব্যাবস্থাপনার নিয়মাবলী।
  3. পরিচালক ও ব্যবস্থাপক পরিচালকের নাম ঠিকানা ও পেশা।
  4. পরিচালক ও ব্যবস্থাপক পরিচালকের দায়িত্ব, কর্তব্য, অধিকার ও ক্ষ্মতা।
  5. পরিচালকদের যোগ্যতাসূচক শেয়ারের সংখ্যা ও মূল্য।
  6. পরিচালকের সংখ্যা।
  7. পরিচালকদের পারিশ্রমিক।
  8. ব্যবস্থাপক ও সচিব নিয়োগ পদ্ধতি।
  9. অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ।
  10. পরিচালকদের অবসর গ্রহণ, দায়িত্ব অব্যাহতি।
  11. মোট শেয়ারের সংখ্যাও শ্রেণীবিভাগ।
  12. প্রতিটি শেয়ারের মূল্য।
  13. শেয়ার বিক্রয় পদ্ধতি।
  14. শেয়ারের মূল্য পরিশোধের পদ্ধতি।
  15. শেয়ার বিক্রির কমিশন।
  16. শেয়ার বাজেয়াপ করার শর্তাবলী ও নিয়মাবলী।
  17. শেয়ার হস্তান্তরের নিয়মাবলী,
  18. ঋণ গ্রহণ পদ্ধতি।
  19. মূলধন পরিবর্তনের নিয়মাবলী।
  20. সভা আহ্বান পদ্ধতি।
  21. সভা পরিচালনা পদ্ধতি।
  22. সভায় ভোট গ্রহণ করার পদ্ধতি।
  23. সদস্যদের ভোটাধিকার।
  24. হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি।
  25. হিসাব নিরীক্ষা পদ্ধতি।
  26. হিসাব নিরীক্ষদের নাম ও ঠিকানা।
  27. লভ্যাংশ ঘোষনার নিয়ম।
  28. কোম্পানীর সীলমোহর রক্ষন ও তার ব্যবহার পদ্ধতি।
  29. ব্যাংকারের নাম ও ঠিকানা।
  30. কোম্পানী বিলোপসাধন পদ্ধতি ইত্যাদি।

স্মারক লিপি ও পরিমেল নিয়মাবলীর মধ্যে পার্থক্য

স্মারক লিপি ও পরিমেল নিয়মাবলীর মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ স্মারক লিপি ও পরিমেল নিয়মাবলী কোম্পানীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এদের বিহশয়বস্তুর মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও তাদের গটনরীতি, প্রকৃতি এবং ধারাভ সংযোজনসমূহের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যায়। নিম্নে স্মারকলিপি ও পরিমেল নিয়মাবলীর মধ্যকার পার্থক্যসমূহ উল্লেখ করা হলঃ
১। সংগাঃ স্মারকলিপি- যে দলিলে যৌথমূলধনী কারবারের নাম, কার্যক্ষেত্র, উদ্দেশ্য, মূলধনের পরিমাণ, সদস্যদের দায় প্রভৃতি বিষয় লিপিবদ্ধ থাকে তাকে স্মারকলিপি বলে।
       পরিমেল নিয়মাবলীঃ যে দলিলে যৌথমূলধনী কারবারের আভ্যন্ত্রীণ কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ থাকে তাকে পরিমেল নিয়মাবলী বলে।
২। মর্যাদাঃ স্মারকলিপি কোম্পানীর মূখ্য দলিল।
       পরিমেল নিয়মবলী -পরিমেল নিয়মবলী কোম্পানীর গৌণ দলিল।
৩। সম্পর্কঃ  স্মারকলিপি-এর দ্বারা বহির্বিশ্বের সাথে কোম্পানীর সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।
       পরিমেল নিয়মবলী- এর দ্বারা কোম্পানীর অভ্যন্তরের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।
৪। বিষয়বস্তুঃ স্মারকলিপি- এতে কোম্পানীর যাবতীয় বিষয়বস্তু সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয়।
       পরিমেল নিয়মবলী- এতে কোম্পানীর যাবতীয় বিষয়বস্তুর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়।
৫। অপরিহার্যতাঃ স্মারকলিপি- সব ধরনের কোম্পানীর জন্য স্মারকলিপি অপরিহার্য।
       পরিমেল নিয়মবলী- সব ধরনের কোম্পানীর জন্য পরিমেল নিয়মাবলী অপরিহার্য নয়।
৬। নিবন্ধনঃ স্মারকলিপি- স্মারকলিপির নিবন্ধন সকল ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।
       
পরিমেল নিয়মবলী- সকল ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।
৭। পরিবর্তনঃ স্মারকলিপি- স্মারকলিপি সহজে পরিবর্তন করা যায় না।
      পরিমেল নিয়মাবলী অতি সহজে পরিবর্তন করা যায়।
৮। রচনার ভিত্তিঃ স্মারকলিপি- এটি কোম্পানী আইন অনুসারে রচিত হয়।
       পরিমেল নিয়মাবলী কোম্পানী আইন ও স্মারকলিপি অনুসারে রচিত হয়।
৯।  নিয়ন্ত্রণঃ স্মারকলিপি- কোম্পানী আইনের দ্বারা নিয়ন্তিত হয়।
         পরিমেল নিয়মাবলী কোম্পানী আইন ও স্মারকলিপি উভয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
১০। বিকল্পঃ স্মারকলিপির কোন বিকল্প নেই।
       পরিমেল নিয়মাবলীর বিকল্প আছে।